রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
মোঃ বিপ্লব, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) থেকে:: শারীরিক খর্বতার কারণে সমাজের অনেক মানুষের কাছে তারা হাসাহাসির পাত্র। কেউ তাদের মূল্যায়ন করে না। কাজ চাইতে গেলে কাজও জুটে না। কিন্তু তারা এখন মানুষের দুঃখ ভুলিয়ে আনন্দ দেওয়াকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বলছিলাম ‘বামন’ মানুষদের কথা। উচ্চতায় তারা তিন ফুটের চেয়েও কম। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ওরস মেলার দ্য গ্রেট রওশন সার্কাসে দেখা মিলে তিনজন বামন মানুষের। সার্কাসের শিল্পীরা যখন বিভিন্ন শারীরিক কসরত দেখাচ্ছিলেন তখন এই বামন মানুষেরা তাদেরই আশেপাশে ঘুরে ঘুরে নানা অঙ্গভঙ্গি ও মজার মজার কথা বলে দর্শকদের হাসাচ্ছিলেন। মানুষকে আনন্দ দিলেও তাদের মনে নেই কোন আনন্দ। কারণ মানুষ তাদের দেখে মজা পায় কিন্তু সম্মান করে না এমনটিই বলছিলেন আবুল কাশেম। ৩৮ বছর বয়সী এই বামন মানুষটির বাড়ি বগুড়ার মহাস্থানগড়ে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন মজার অভিনয় ও কৌতুক করে মানুষকে হাসাই তখন তারা হাততালি দেয়। কিন্তু রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে কেউ কথাও বলে না। আমাদের দেখে হাসাহাসি করে।’ শৈশব থেকেই সার্কাসে ‘জোকার’ হিসেবে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সার্কাসে জোকারের কাজ ছাড়া অন্য কোথাও কাজ চাইতে গেলে কেউ কাজ দেয় না। সার্কাসে জোকারের কাজ করেই সংসার চালাচ্ছি।’ তিনি জানান, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। তবে তারা বামন নয়, উচ্চতায় স্বাভাবিক মানুষের মতোই। ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমার জীবনে আর কোন কষ্ট নাই। ভালোই আছি। তবে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয় সার্কাসে কাজ করার জন্য।’
বাগেরহাটের রামপাল থানায় বাড়ি ৩৭ বছর বয়সী খালিদ হাসানের। তিনি জানালেন, শৈশব থেকে মাছের ঘেরে কাজ করলেও গত ৫ বছর থেকে সার্কাসের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো আল্লাহরই সৃষ্টি, তারপরও সমাজের অনেক মানুষ আমাদের দেখে হাসাহাসি করে। তাই মানুষ হাসানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। তাদের হাসাতে ভালোই লাগে। এখন কষ্ট নাই।’
২৬ বছর ধরে সার্কাসে জোকার হিসেবে কাজ করছেন আব্দুল মজিদ। তার ভাষায়, ‘খাটো মানুষ কেউ কাজে নিতে চায় না। সার্কাসে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়েই সংসার কোন মতে চলে। তবে বর্তমান সময়ে বছরে মাত্র ৩-৪ মাস সার্কাস চলে। সার্কাস বন্ধ থাকলে আমার মতো খাটো মানুষদের খুব কষ্ট হয়। এমনিতে মানুষদের হাসিয়ে সার্কাসে ভালোই আছি।’